মাদকসেবন যে কোনো বয়স্ক মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে যেটা কারও অজানা নয়। ব্রেন স্ট্রোক এমন একটি রোগ যা কোনো স্থান, কাল, পাত্র ভেদে হয় না। এদিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা চাঞ্চল্যকর প্রমাণ পেয়েছেন যে, গাঁজা ও ইয়াবা সেবন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (হেমোরেজিক স্ট্রোক) এবং রক্ত জমাটবাঁধা (ইসকেমিক স্ট্রোক) উভয় এর জন্যই প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।
২০০০ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অ্যাম্ফেটামিন বা ইয়াবা সেবন বহুলাংশে বেড়েছে। পিছিয়ে নেই কোকেন ও ক্যানাবিস বা গাঁজা সেবনের মাত্রা। জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (JAMA) গবেষণাপত্রে ৮ লাখ ১২ হাজার ২৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি স্ট্রোক রোগীর বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইয়াবা বা অ্যাম্ফেটামিন সেবনে স্ট্রোক ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
ইয়াবা ও কোকেন সেবনকারীরা হেমোরেজিক স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হয়। গাঁজা বা ক্যানাবিস সেবন ইসকেমিক স্ট্রোকের জন্য বেশি দায়ী। সর্বোপরি, ইয়াবা সেবনে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর হার বেশি প্রতীয়মান হয়।
মাদকের সাথে স্ট্রোক
প্রাকৃতিক বা সিনথেটিক ক্যানাবিনল গাঁজায় বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ ফ্রি রেডিক্যাল বা বিক্রিয়ায় সক্ষম অক্সিজেন যৌগ তৈরি করে যা টিস্যুর অক্সিজেন কমিয়ে দেয়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বলা হয় এ অবস্থাকে। এটি স্ট্রোক হওয়ার একটি স্বীকৃত মেকানিজম। এ ছাড়া কোষের শ্বসন তথা পাওয়ার হাউজ- মাইটোকন্ড্রিয়ার ওপরে মাদকের মেটাবোলাইটগুলো মারাত্মক প্রভাব ফেলে বলে জানায় বিশ্ব সমাদৃত আমেরিকান জার্নাল নিউরোলজি। জার্নালে (২০০০-২০২০) সাল পর্যন্ত প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলোর বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ এসব তথ্য পাওয়া যায় স্ট্রোক মেকানিজম বিষয়ে।
ইউরোপীয় ও আমেরিকান বিজ্ঞানীরা একমত যে, ক্যানাবিনয়েড যৌগগুলো রিভার্সিবল সেরেব্রাল ভেসোকনিস্ট্রকশন বা মস্তিষ্কের রক্তনালির সংকোচন ঘটায় যার ফলে ইসকেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তরুণরা!
মেটাঅ্যানালাইসিসে দেখা যায়, মাদক সেবনে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের ১৪.৭ ভাগ কৃত্রিম বা সিনথেটিক মাদক সেবন করেন। শতকরা ৮৮.৩ ভাগ স্ট্রোকই ইসকেমিক স্ট্রোক এবং ৪ শতাংশ স্ট্রোকের ধরণ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। স্ট্রোকে আক্রান্ত মাদকসেবীদের বয়সের গড় ৩২.৩ বছর যেখানে সাধারণ মানুষের জন্য গড় বয়স ষাটোর্ধ্ব। এ ছাড়া দেখা যায় পুরুষ মাদকসেবীদের ঝুঁকি ৩.৪ গুণ নারী ইয়াবা ও গাঁজা সেবনকারীদের চেয়ে। অধিকাংশ মাদকজনিত স্ট্রোক ৮১ ভাগ ক্ষেত্রে ক্রোনিক মাদকসেবী বা দীর্ঘদিন ধরে যারা গাঁজা সেবন করছেন তাদের মধ্যে বেশি। আবার দেখা যায়, স্ট্রোক হওয়ার আগে হঠাৎ বেশি পরিমাণে গাঁজা ও ইয়াবা সেবন হয়েছে। শতকরা ৬৬ ভাগ ক্ষেত্রে গাঁজা সিগারেটের সঙ্গে সেবন করা হয়।
মাদক সেবনের ফলে সংঘটিত স্ট্রোকের প্রথম লক্ষণ হতে পারে মাথাব্যথা। এ ছাড়া কথা জড়িয়ে যাওয়া ও চোখে ঝাপসা দেখা সমস্যা নিয়েও রোগীরা চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে পারেন।
গত ৯ বছরে বৈশ্বিক স্ট্রোক ঝুঁকির হার প্রতি ৬ জনে ১ জন থেকে বেড়ে এখন শতকরা ২৫ ভাগ। অর্থাৎ চারজনে একজনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। স্ট্রোক এখন বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও অক্ষমতার প্রধান কারণ, তবে সুস্থ জীবনযাপন করলে স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব।